উৎপাদন বলতে মূলত উপযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায় । উৎপাদিত দ্রব্যের বিনিময় মূল্য থাকতে হবে । আবার উপযোগ সৃষ্টি না হলে উৎপাদন বোঝায় না। উপকরণ বা প্রাথমিক দ্রব্য ব্যবহার করে নতুন কোনো দ্রব্য বা উপযোগ সৃষ্টি করাকে উৎপাদন বলে। যেমন-আটা, লবণ, পানি, বেলুন ইত্যাদি ব্যবহার করে রুটি বানানো হয় । রুটি একটি উৎপাদিত নতুন দ্রব্য । রুটি খেয়ে আমরা ক্ষুধা নিবারণ করি বা তৃপ্তি পাই । অর্থাৎ রুটি তৈরি করে উপযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে । আমরা টাকা বা অন্য দ্রব্যের বিনিময়ে রুটি পেতে পারি । অর্থাৎ নতুন দ্রব্য রুটির বিনিময় মূল্য আছে । ব্যবসা করার জন্য রুটি বানানো হলে অনেক সময় রুটিগুলো বাজারে নিয়ে যেতে হয় । উপকরণ সংগ্রহ থেকে বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব কাজ তদারকি করে সংগঠন বা সংগঠন পরিচালক উদ্যোক্তা। যেমন কী উপকরণ লাগবে, কোথা থেকে উপকরণ আনবে, কে আনবে, কে লবণ, আটা, পানি মিশিয়ে খামির তৈরি করবে, কে রুটি বেলবে, কে সেঁকবে, কে বাজারে নিবে, কত দামে বিক্রয় করবে, এই সবই দেখে সংগঠন বা সংগঠন পরিচালক উদ্যোক্তা। সব কিছু সংগঠন দক্ষতার সঙ্গে তদারকি না করতে পারলে নির্দিষ্ট পরিমাণ উপকরণ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ উৎপাদন পাওয়া সম্ভব হবে না । একই ব্যক্তি সংগঠক এবং উৎপাদক হতে পারে । যেমন : যে ছোট/মাঝারি কৃষক নিজে নিজের জমিতে ফসল উৎপাদন করছেন, তিনি একই সাথে উৎপাদক এবং সংগঠক। কিন্তু যে কারখানার মালিক ম্যানেজার হিসেবে শ্রমিকদের দ্বারা কারখানা চালাচ্ছেন তিনি সংগঠক হলেও উৎপাদক নন। আবার যে কারখানার মালিক ম্যানেজার রেখে শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন করাচ্ছেন তিনি সংগঠকও নন, , উৎপাদকও নন তিনি নিছক মালিক। আবার যে মালিক নিজে উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করছেন এবং অন্য উৎপাদকদের তত্ত্বাবধান করছেন, তিনি হচ্ছেন একই সঙ্গে মালিক-উৎপাদক-সংগঠক।
উৎপাদনে উপযোগ সৃষ্টি পাঁচ ভাগে দেখানো যায় । যেমন-
১. রূপগত উপযোগ : দ্রব্যের রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন দ্রব্য উৎপাদন করাকে রূপগত উপযোগ বলে । যেমন, কাঠকে সুবিধামতো পরিবর্তন করে খাট, চেয়ার, টেবিল বানানো হয় । খাট, চেয়ার, টেবিল হলো রূপগত উৎপাদন ।
২. স্থানগত উপযোগ : কোনো কোনো দ্রব্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করলে তার উপযোগ বাড়ে । যেমন, বনের কাঠ সাধারণত বনের আশপাশের লোকজন খড়ি হিসেবে ব্যবহার করে । শহরে আনলে মানুষ এই কাঠ দিয়ে আকর্ষণীয় আসবাবপত্র বানাতে পারে- ফলে এর উপযোগ বাড়ে ৷ আবার বনে ফুলের তেমন কদর নেই । কিন্তু সেই ফুলসহ গাছ শহরের বাড়ির আঙিনায় রাখলে এর কদর বাড়ে অর্থাৎ উপযোগ বাড়ে ।
সময়গত উপযোগ : কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানে অনেক জিনিসের উৎপাদন না বাড়লেও উপযোগ বাড়ে । এদেরকে সময়গত উপযোগ সৃষ্টি বলে। যেমন, পৌষ-মাঘ মাসে ধানের মৌসুমে ফলন বেশি হয় । আবার এই সময়ে ধানের দাম কম থাকে। এ সময় ধান মজুদ করে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বিক্রি করলে বেশি দাম পাওয়া যায় । এখানে ধানের উৎপাদন হ্রাস বা বৃদ্ধি না পেলেও তার উপযোগ বা দাম বর্ধিত হবে।
৪. সেবাগত উপযোগ : মানুষ তার সেবা দ্বারা যে উপযোগ সৃষ্টি করে তাকে সেবাগত উপযোগ বলে । শিক্ষক শিক্ষাদান করে শিক্ষিত মানুষ তৈরি করে, ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখে বা উৎপাদন ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখে বা বৃদ্ধি করে ।
৫. মালিকানাগত উপযোগ : কোনো কোনো অর্থনৈতিক দ্রব্য ও সেবার মালিকানা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত উপযোগ সৃষ্টি করা যায় । যেমন, অব্যবহৃত জমি কিনে একজন কৃষক চাষাবাদ করে উৎপাদন করতে পারে অথবা ব্যবহৃত জমি কিনে আরো ভালোভাবে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে পারে ।
উপরে তোমরা উৎপাদনের মাধ্যমে উপযোগ সৃষ্টির ধারণা পেলে । এবার তোমরা জানতে পারবে এই উৎপাদনের কাজটি কে বা কারা করে । রমজান আলী একজন কৃষক। তাঁর তিন বিঘা কৃষিজমি রয়েছে । এই জমিতে রমজান নিজেই এক ঋতুতে ধান উৎপাদন করেন, অন্য ঋতুতে গম উৎপাদন করেন। ধান ও গম উৎপাদনের মাঝখানে সবজি চাষ করেন । এই সব উৎপাদনের জন্য উপকরণ হিসাবে বীজ, সার, পানি, কীটনাশক, ধান-গম কাটা ও মাড়াই যন্ত্র ব্যবহার করেন । এই সব কাজে পরিবারের লোকেরাও তাকে সহযোগিতা করে।
আরও দেখুন...